মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। লোভের কাছে কখনও হার মানেননি। নিজের আখের গোঁছাননি রাজনীতি করে। প্রত্যাখ্যান করেছেন পুরস্কার। সদ্য মৃত্যু বরণ করা বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ খ্যাতি পেয়েছিলেন কুড়েঘরের মোজাফফর হিসেবে। মৃত্যুর সময় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন তিনি। একাত্তরে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন মোজাফফর আহমদ। প্রশিক্ষণ শেষে ওই বাহিনী ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনেও ভূমিকা পালন করেন মোজাফফর আহমদ। মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল, কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ এমএ পাস করার পর ইউনেসকো ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যোগ দেন অধ্যাপনায়। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোজাফফর আহমদ এই আন্দোলন সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ওই বছর সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে জয়ী হন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদই প্রথম ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব তোলেন। এরপর ছয় দফাসহ প্রতিটি আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন তিনি। ষাটের দশকের শেষ ভাগে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নপন্থি দুই ধারা স্পষ্ট হয়। এ নিয়ে মতবিরোধ থেকে মাওলানা ভাসানী থেকে আলাদা হয়ে যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ভাসানী নেতৃত্বাধীন ন্যাপ চীনপন্থি, আর ন্যাপ মোজাফফর হয় মস্কোপন্থি।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার কাকরাইলে মোজাফফর আহমদের বাবার বাড়ি লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু হলে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান ভারতের আগরতলায়। তাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা হলে তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকেও সদস্য করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকার করা মোজাফফর আহমদ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও নেননি।মোজাফফর আহমদ ১৯৫২ সালের ২৪ অক্টোবর আমিনা আহমেদকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র মেয়ে আইভির জন্ম হয় ১৯৫৫ সালে।